
রাত হলে দূর থেকে শিয়ালের ডাক, আঁধারে ঝিকিমিকি জোনাকির ঝাঁক।
উঠোনে শুয়ে দেখি খোলা আসমান, আধকাটা চাঁদ আর ঝিঁঝিঁদের গান। মাঝে মাঝে উঁকি দেয় ভিনদেশী তারা এই হলো আমাদের মায়াভরা পাড়া।
গাছগাছালিতে ঢাকা পাড়ার চারিদিক, কিছুক্ষণ পরপরই কু ঝিক ঝিক! রেলপথের পাশেই গ্রামের বাজার যেইখানে আমাদের সন্ধ্যাটা পার।
পড়াশুনা বাদ দিয়ে চা আর গান মুরুব্বিরা ঘুরতো মুখে দিয়ে পান। খাবার হোটেলে ভীর, বাংলা ছবি। কিন্তু রাত ৯ টায় বন্ধ হতো সবি।
বিকেলে ছেলেপেলে ভাগ করে দল, কখনো ক্রিকেট, আর কখনো ফুটবল। কখনো বা দুই পাড়া খুব মারামারি, শেষমেশ কান ধরা, বড়দের ঝাড়ি!
পাড়ার কিছু দূরেই দুটো স্কুল, বাঁদরামি করলেও বুঝতাম পড়াশুনা মূল। তাইতো আমরা কুড়িয়েছি সুনাম, জেলায় ছড়িয়ে যেতো আমাদের নাম।
তাল, কাঠাল আর জাম গাছ, আম কুড়োতাম ফেলে সব কাজ, আমাদের পাড়ার মাঝেই মস্ত পুকুর দাপিয়ে বেড়াতাম ভরদুপুর!
চারিদিক অবারিত সবুজ, খালের পাশের বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত, আড্ডা প্রিয় অগ্রজ – অনুজ মাটির সোঁদা গন্ধ আর নজরকাড়া। এই নিয়ে আমাদের মোহনীয় পাড়া।
নিয়ন আলোর যান্ত্রিক এই শহরে থেকে আমার পাড়া, আমার গ্রাম খুব মিস করি। লিখতে লিখতে নস্টালজিক হয়ে গেলাম। ছোট একটা কবিতা অথবা অল্প কিছু কথা দিয়ে নিজের পাড়ার, এই টান , আবেদনটা বুঝানো যাবেনা।
এখনো মাঝে মাঝে ব্যস্ত শহরের ব্যস্ততা কাটিয়ে মায়ার টানে ফিরে যাই পাড়ায়। এখনো আড্ডা দেই বাজারে কবির মামার চায়ের দোকানে। দেশ, বিদেশ, রাজনীতি নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় তুলি। স্কুল জীবনের স্যারদের সাথে, পাড়ার চাচা কাকাদের সাথে দেখা হয়। বয়সের ভারে নুইয়ে পরেছেন অনেকেই। পা ধরে সালাম করি।
গ্রামের পাড়াগুলোতে এখন কারো উঠোনে শুয়ে জোছনা দেখার সময় নেই। আধুনিকতার নামে দূরে সরে যাবার শহুরে যান্ত্রিকতা এইখানেও চলে এসেছে। জীবিকার টানে কেউবা বিদেশ, কেউবা অন্য কোন নগরে। ইটপাথরের ছাদে এখন টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শোনার ইচ্ছা কেবল বিলাসিতা!
তবুও বৃষ্টি এলে এখনো পাতায় পাতায় পানি পড়ার শব্দ পাওয়া যায়, এখনো কু ঝিক ঝিক শব্দে কিছুক্ষণ পরপরই ট্রেন ছুটে যায় দূরদূরান্তে। এখনো নাড়ির টানে এই সবুজে ছুটে আসতে চাই বারেবার।
শৈশবের পাড়ার মনোমুগ্ধকর সময়গুলো কি এখনো স্মৃতিকাতর করে তোলে?
কে জানে! হয়তো!...
Return from Describe Your Para: বৃষ্টি ভেজা মাটির গন্ধ to pitboy's Web3 Blog
