pitboy Blog Banner

pitboy

মেঘ রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার দিন | সাজেক ট্যুর | পর্ব ০১

সকাল থেকেই আকাশটা গুমোট হয়ে আছে। যেকোনো মুহূর্তে অঝোরে বৃষ্টি নামবে। আচ্ছা, এই কালো ভেজা মেঘের ভেতর থাকার অনুভূতি কেমন হবে? সেই ফিলটা পেতেই প্রতি বছরের বর্ষায় ভারতের মেঘালয় যাবার প্ল্যান করি। বছরকে বছর চলে যায়, নানা অজুহাতে আমার আর মেঘের আলয় যাওয়া হয়না!

একদিন এক বন্ধুর প্রোফাইলে দেখি রাঙ্গামাটি উপজেলার সাজেকে নাকি মেঘ ধরা যায়। আর এমন এমন সব লোভনীয় ছবি দিলো যে আমার আক্কেল গুড়ুম। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন্য হতে হবে। হতে হবে বৃষ্টির দিন!

IMG_20180715_140007.jpg

তাই একদিন সকালে ঠিক আজকের মতই গম্ভীর আকাশ দেখে হুট করে সাজেকের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরলাম। চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৩ ঘন্টার জার্নি শেষে পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন গুহা, রিসাং ঝর্ণা, লেক ঘুরলাম। বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর এবং পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ি। সে গল্প আরেকদিন হবে।

রাতটা হোটেলে কাঁটিয়ে খুব ভোরে "চাঁদের গাড়ি" (জীপ) করে বেড়িয়ে পরলাম সাজেকের পানে। উপজাতীয় বিভিন্ন কোন্দলের কারণে পর্যটকদের এখনো আর্মি প্রোটেকশনে সাজেক যেতে হয়। আর বলে রাখা ভালো পুরো সাজেক ভ্যালি কিন্তু বাংলাদেশ আর্মির তত্ত্বাবধানে আছে।

যতই সাজেকের কাছে যাচ্ছি ততই প্রকৃতি তার অপার্থিব সৌন্দর্য দিয়ে ছুরির মত আঘাত করছে। এই আঘাতে অবশ্য ব্যাথা নেই, আছে প্রশান্তি! জিগজ্যাগ আর উঁচু নিচু রাস্তা পাড়ি দিয়ে প্রায় ৩ ঘন্টা পর সাজেক পৌঁছুলাম।

সাজেকে পৌঁছে গেলাম সকাল ১০টা বাজেই। নীল আকাশ, সবুজ পাহাড়, দুধসাদা মেঘের সৌন্দর্য যে কাওকে মুদ্ধ করে দেবে। কিন্তু আমার ভিতর একটা হতাশা ভাব কাজ করছিলো। আমি এসেছি পাহাড়ে বৃষ্টি আর মেঘের ভেতর কাটাতে। আমি থাকবো সাজেকে সবে দুদিন! এই দুই দিনে মেঘ ছুঁতে না পারলে মনে একরাশ হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হবে।

সাজেক ভ্যালি পাহাড়ের উপর সাজানো গুছানো ছোট্ট একটা গ্রাম বা লোকালয়। হাতেগুণা অল্প কিছু মানুষ বাস করেন, লোকাল মানুষ থেকে আর্মি এবং পর্যটকই বেশি মনে হলো। লোকালরা যথেষ্ট মিশুক। আমি তাদের সাথে গল্প করে ঘন্টার পর ঘন্টা পার করে দিতে পারবেন।

আরেকটা দারুণ জিনিস খেয়াল করলাম, এইখানে সবাই কুকুর পালে। যেই সেই কুকুর না, একেবারে বিলাতি কুকুরের মতই। আর সবাই যথেষ্ট শিক্ষিত, সত্যি বলতে কি শহর থেকে এত দূরে এসে এক পাহাড়ী জনপদ আমার জন্য এত সারপ্রাইজ নিয়ে আসবে কল্পনাও করিনি। সোলার প্যানেল দিয়ে পুরো সাজেক ঘেরা, রাতে এমনকি স্ট্রিট লাইট ও চলে সোলার দিয়ে। এত ছোট কমিউনিটিতেও ক্লাবঘর, মসজিদ, গির্জা, ছোট একটা স্কুল সব আছে; আর আছে টুরিস্টদের জন্য হোটেল, রেস্টুরেন্ট সহ সব ব্যবস্থা। চাইলে আর্মিদের অনুমতি নিয়ে ক্যাম্পিং ও করতে পারবেন।

আর এই দুইদিনের ট্যুরে প্রচুর পাহাড়ি আনারস আর কলা খেলাম। তাও বেশিরভাগ ফ্রি তে! সাজেক ভ্যালি প্রতিটা মুহূর্ত আমাকে সারপ্রাইজ দিয়ে গেছে।

আমরা মেঘপুঞ্জি নামে একটা কটেজে উঠলাম। কটেজে ঢুকতে কাঠের একটা পুল পার হতে হতে। কটেজ এবং এর আশে পাশের ভউ দেখে তব্দা খেয়ে মিনিটখানেক সেই পুলের উপরেই দাঁড়িয়ে ছিলাম! একি অপরূপ সৌন্দর্য! এই পোস্টের কোন ছবিই কিন্তু এডিট করা না। চিন্তা করুন, এডিট ছাড়া এত সুন্দর যদি হয়ম তাহলে সামনাসামনি দেখতে কেমন লাগবে?

কটেজ গুলোর ছাদ খড়ের ছাউনি দিয়ে বানানো, দেয়াল কাঠের এবং বেড়ার। সাজেকে আধুনিক কিছু রিসোর্ট ও আছে, কিন্তু এসেছি প্রকৃতির স্বাদ নিতে, এর মাঝেই না থাকলে কি হয়?

উপরের ছবিটা বিছানায় শুয়ে তোলা। ঠিক আমার কল্পনার ঘরের মত। এইতো সামনের পাহাড়গুলো কিন্তু বাংলাদেশের অংশ নয়। ওইগুলো ভারতের মিজোরাম প্রদেশে পরেছে।

সাজেক হলো দ্বীপের মত পাহাড়ের চুড়ার একটি এলাকা, যার চারপাশে যতদূর চোখ যায় আর কোন বসতি নেই। সবুজ আর সবুজ!

খেতে গিয়েছিলাম রেস্টুরেন্ট এ, কিন্তু খাবো আর কি! সৌন্দর্য গিলতে গিলতেই সময় শেষ।

IMG_20180715_151332.jpg

কটেজের সাথেই ঝুলন্ত বারান্দা আছে। বারান্দায় এসে দম বন্ধ হয়ে এলো, খুশিতেই বোধহয়। এত তাড়াতাড়ি প্রকৃতি রূপ পাল্টাবে বুঝতেই পারিনি। মেঘের দল ধেয়ে আসছে আমাদের দিকে। এর জন্যই তো সাজেক আসা!

অপেক্ষা করতে থাকলাম।

বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। অল্প কিছু সময়ের মধ্যের ভর দুপুরে চারপাশ পুরো কালো মাঘে ঢেকে গেলো।

মুহূর্তে কালো মেঘের মধ্যে ঢুকে গেলাম। টিপ টিপ বৃষ্টি শুরু হলো। আর অদ্ভুত রকম ঠাণ্ডা হয়ে গেলো চারপাশ। কেমন এক ধরণের ভেজা ভেজা অনুভূতি! ভাষায় প্রকাশ করার মত না!

লিখতে লিখতে নস্টালজিক হয়ে গেলাম। এই অনুভূতি থেকে বের হতে চাচ্ছিনা, পাঠকদেরও বের করতে ইচ্ছা করছেনা। তাই এই বেলা ক্ষান্ত দিলাম। বাকিটা পরের পর্বে শেষ করবো। জানাবো সাজেক নিয়ে আরো অনেক কিছু, কংলাক পাড়ার কথা।

এমন পরিবেশে রবীন্দ্র সাহেব থাকলে কালজয়ী আরো কিছু পদ্য, গান রচনা করে ফেলতেন।

*আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে* *জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না ।* *এই চঞ্চল সজল পবন-বেগে উদ্‌ভ্রান্ত মেঘে মন চায়*

মন চায় ওই বলাকার পথখানি নিতে চিনে।


Return from মেঘ রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার দিন | সাজেক ট্যুর | পর্ব ০১ to pitboy's Web3 Blog

মেঘ রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার দিন | সাজেক ট্যুর | পর্ব ০১ was published on and last updated on 29 Jul 2020.