যখন পিচ্চি ছিলাম তখন থেকেই শখ ছিলো পুরো দুনিয়া চষে বেড়াবো। কত দেশ আছে পৃথিবীতে? ২০০+? কোন দেশ বাদ দিবোনা। এই পৃথিবী পুরো দেখার আগেই যদি মারা যাই আফসোস থেকে যাবে।
উপরওয়ালা আমার মনের কথা শুনেছেন কিনা কে জানে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকাবার পরেই ঢুকে গেলাম ট্রাভেল এজেন্সি লাইনে। তবে ভ্রম ভাঙল কিছুদিন পর! যখন বুঝলাম যে নিজের ঘোরার সময় নেই, মানুষের ট্রাভেল প্ল্যান করতে করতেই দিন পার।
তবে এর মাঝেই সল্প বাজেট, দুনিয়ার ঝামেলার মাঝে সাহস করেই দেশের মধ্যে এবং বাইরে বেশ কিছু জায়গা ঘুরে ফেললাম লাস্ট কয়েক বছরে। তবে শান্তি পাইনি। এখনো যে লিস্টের ৯৯% ই বাকি!
দেশ ভ্রমনের মানে হলো ঘরের পাশে শিশিরবিন্দু দেখার আনন্দ। কিন্তু বিদেশ ঘুরার আবেদনটা আমার কাছে ভিন্ন! বিভিন্ন মতের মানুষ, রঙ বেরঙের প্রকৃতি, বিভিন্ন ভাষা - কালচার, খাবারদাবার আমার খুব বেশি কাছে টানে। দুনিয়ার প্রতিটা প্রান্ত খুব কাছ থেকে দেখার ইচ্ছা থেকেই বিদেশ ভ্রমণের নেশাটা শুরু।
বেশ কিছুদিন ব্যস্ততার কারণে পোস্ট কম দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যখন দেখলাম @bdcommunity আমার ফেভারিট টপিক সিলেক্ট করে দিয়েছে লেখার জন্য, ভাবলাম এই সুযোগ মিস করা উচিত হবেনা। আবার প্ল্যান করে অনেক কিছু লিখবার ও সময় পাচ্ছিনা। ভাবলাম ছবি ব্লগ দিয়ে দেই। ছবি নীরবে অনেক কথা বুঝিয়ে দেয় অকপটে যা হাজার লাইন লিখেও বুঝানো সম্ভব না!
হিমালয় কন্যা নেপাল!
যদিওবা কাছের দেশ ভারত, কিন্তু ভারত টপকে নেপালেই ছিলো আমার প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। চার বন্ধু মিলে এক সপ্তাহের মধ্যে প্ল্যান করে নেপাল ট্যুর হয়ে গেলো আমাদের। অবশ্য নেপাল যাবার আরেকটা কারণ ছিলো ভিসা ঝামেলা নেই, অন এরাইভাল ভিসা। নেপালে কাঠমুন্ডু, সারানকোট, পোখারা সহ বেশ কিছু জায়গা ঘুরার সৌভাগ্য হয়েছে।
বুদ্ধনাথ মন্দির, কাঠমুন্ডু। প্রচুর পায়রা উড়ে বেড়ায় এইখানে। প্রচুর ভীর ছিলো এইখানে।
কাঠমুন্ডু দুর্বার স্কয়ার। বছর কয়েক আগে ভূমিকম্পে ওল্ড কাঠমুন্ডু সহ বেশ কিছু দর্শনীয় স্থানের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিলো। তার মধ্যে দুর্বার স্কয়ার একটি।
দারুণ এক ভদ্রলোক ছিলেন। খুব ভোরে সূর্যোদয় দেখতে সারানকোটের পাহাড়ে উঠে ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে গল্প জুড়ে দিয়েছিলাম। পিছনে হিমালয়ের এক প্রান্ত।
পোখারায় অবস্থিত ফিওয়া লেকের সৌন্দর্য বলার মত না। অদ্ভুত শান্তিময় একটা জায়গা। এই শান্তির জন্য ইউরোপিয়ানরা এইখানে এসে মাসকে মাসও থেকে যায়।
Incredible India!
কথায় আছে, যদি একই সাথে প্রকৃতির সব রুপ দেখতে চাও, তবে ভারত যাও! কি নেই এইখানে - মরুভুমি, তুষারপাত, পাহাড়, সমুদ্র, ওয়াটারফল, একেবারে টোটাল প্যাকেজ যাকে বলা যায়। পার্সোনাল এবং অফিসের কাজের সুবাদে বেশ কয়েকবার ভারত যাবার সৌভাগ্য হয়েছে।
এই সেই প্যানগং লেক (লাদাখ) যার আশেরপাশের দখল নিয়ে এখন ভারত আর চীনের ধুন্ধুমার মারামারি চলছে। ভাগ্য ভালো ঘুরে এসেছিলাম। অপার্থিব সৌন্দর্য। ছবি দেখে কল্পনাও করা যাবেনা এর বাস্তব সৌন্দর্য।
খারদুংলা পাস! বিশ্বের সবচাইতে উঁচু মোটরেবল রোড এইখানে অবস্থিত। প্রায় ১৭০০০ ফিট উচ্চতায় উঠে দম বন্ধ হয়ে যাবার দশা।
কাশ্মীরের বেতাব ভ্যালি! সানি দেওলের বেতাব মুভির পরেই এই জায়গার এমন নাম।
কল্পনা করুন আপনার রুমের জানালা থেকে ঘুম থেকে উঠেই এমন ভিউ। পাহালগাম, শ্রীনগর।
শ্রীনগরের ডাল লেকের পাশে সারি সারি ভাবে দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষ পুরানো হাউজবোট।
ইন্ডিয়া গেইট, দিল্লী।
ইন্দিরা গান্ধীর বাসভবন এখন মিউজিয়াম। আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দেখে এক মুহূর্ত থমকে দাঁড়ালাম।
সাইন্স সিটি, কলকাতা। কলকাতায় যতবার আসি আপন লাগে এই শহরটাকে।
দ্বীপের দেশ ইন্দোনেশিয়া!
ইন্দোনেশিয়া, বিশেষ করে বালি না গেলে জীবনটা বেশ কয়েক আনাই বৃথা থাকতো। বিশেষ করে কাপল অথবা ব্যাচেলর ট্রিপের জন্য বালি হলো বেস্ট টুরিস্ট ডেস্টিনেশন। আমি অবশ্য ব্যচেলর ট্রিপে গিয়েছিলাম। ;) বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে বন্ধুত্ব, আড্ডা- পার্টি, আনলিমিটেড বিন্তাং বিয়ার আর অপার্থিব সৌন্দর্যের সাথে দারুণ ১০ টা দিন কাটিয়েছিলাম এই সপ্নের জায়গায়। পুরো গল্প আরেকদিন হবে।
বালির খুব বেশি ছবি নেই আমার কাছে। থাকলে হার্ডড্রাইভের চিপায়। যা আছে সব গিলির। গিলি তারাঙ্গন হলো আপনার স্বপ্নের দ্বীপ। কি নেই এই দ্বীপে! নির্জনে সময় কাটাতে চান? অথবা সারারাত ধুমসে পার্টি করতে চান? সব পারবেন এইখানে।
এই দ্বীপে শুধু সাইকেল আর ঘোরার গাড়ি ছাড়া কিছু নেই।
দূরে আরেক শহর লম্বক দেখা যাচ্ছে।
স্নোরকেলিং করার সময় পানির নিচে!
বিকালের গিলি! মনে আছে টানা কয়েক ঘন্টা ছাউনি দেওয়া টং এ বসে অপলকে সৌন্দর্য গিলেছি।
স্বর্গরাজ্য থাইল্যান্ড!
থাইল্যান্ড বর্তমানে টুরিস্টদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ডেসটিনেশন। করোনার আউটব্রেকের ঠিক আগেই ঘুরে এলাম ব্যাংকক, ফুকেট, পাতায়া। এইটাও ছিলো ব্যাচেলর ট্রিপ! ;) কথায় আছে - ফ্যামিলি অথবা বউ নিয়ে কোনদিন পাতায়া যাবেন না। :P তবে ফুকেট হলো যুগলদের জন্য পারফেক্ট টুরিস্ট স্পট।
পাতায়ার কোরাল আইল্যান্ড, আইল্যান্ডের পাহাড়ের উপর থেকে তোলা। পানি অদ্ভুত রকমের নীল!
সেইম কালারের পানি ইন্দোনেশিয়াতেও পেয়েছি। আমাদের দেশের সেইন্টমারটিনের পানিও অনেকটা কাছাকাছি।
পাতায়া ওয়াকিং স্ট্রিটের একটি বার।
ওয়াকিং স্ট্রিট, পাতায়া।
ব্যাংকক সাফারি ওয়ার্ল্ড। জিরাফ ভাইজান খাবারের লোভে উঁকি দিতে এলেন।
রাতের ব্যাস্ত ব্যাংকক! ফুট ওভার ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে আড্ডা মারার মজাই অন্যরকম। সেটা হোক ব্যাংকক, কিংবা গুলিস্তান!
ইচ্ছা আছে আমার সবগুলা ট্যুর নিয়ে আলাদা আলাদা সিরিজ ব্লগ লিখবো। নিজের ভ্রমণগুলোর একটা ফিরিস্তি রাখা উচিত কোথাও।
কিছু ট্রাভেলারদের দেখি রাতদিন দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোন পিছুটান নেই, স্বাধীন পাখির মত।
আর আমি আটকা পড়েছি পিছুটানের গ্যাঁড়াকলে! সাধ থাকলেও সময় নেই, সময় থাকলে সাধ্য নেই। সাধ আর সাধ্যের মাঝে এখনো লড়াই করে যাচ্ছি। হয়তো খুব শীঘ্রই অন্নপূর্ণা সার্কিট ট্রেক করতে পারবো, উত্তর মেরুতে ফিনল্যান্ডের পাদদেশে গিয়ে নরদান লাইট দেখতে পারবো, অথবা আমেরিকা - কানাডার মাঝের সেই জ্বালাময়ী জলপ্রপাত দেখতে পারবো।
স্বপ্ন দেখতে দোষ কি? সত্যিই তো হতে পারে যে কোনদিন!
দুনিয়াটা চষে বেড়ান, এই জীবনে না পারলে আর কখন!
Return from Wanderlust (ভ্রমণের নেশা): আমার যত বিদেশ ভ্রমণ! (ছবি ব্লগ) to pitboy's Web3 Blog
