pitboy Blog Banner

pitboy

মেঘ রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার দিন | সাজেক ট্যুর | শেষ পর্ব

মেঘের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়াতে গত পর্ব শেষ করতে পারিনি। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত না আসলে। কোন শব্দ দিয়ে এই ফিলিংস প্রকাশ করা যাবেনা। এইটা আমার একার না, যারা এই পরিবেশের মধ্যে পরেছে, তাদের সবার ফিলিংস কিন্তু একই।

পড়তে পড়তে আমি নস্টালজিক হয়ে গেলাম। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ট্যুর ছিল সাজেক। বিশেষ করে সকাল বেলা যখন চারপাশে মেঘ জড়ো হলো, আমাদেরকে ঘিরে ধরলো, অসাধারণ একটা অনুভূতি ছিল সেটি। মনে হচ্ছিল পৃথিবীতে নেই, আমি এক অপার্থিব জগতে। কখনো ভুলবো না। - @tariqul.bibm

দুপুর পেড়িয়ে বিকেলের দিকে এসে বৃষ্টি কমে এলো। তবে দুপুর বিকেল ঠাওর করা দুষ্কর। কালো মেঘে পুরো সময়টাই সন্ধ্যের মতো। বৃষ্টি থামার পর নিস্তব্ধতা নেমে এলো চারিদিকে। ইচ্ছেমতো মেঘের ভেতরে ভিজেছি। তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে বৃষ্টিতে ভেজা সাজেক ভ্যালি দেখতে বেড়িয়ে পড়লাম।

বৃষ্টি বন্ধ হলেও মেঘের আনাগোনা কিন্তু কমেনি। এর মাঝেই হেঁটে এই সবুজে ঘেড়া ছোট্ট জনপদ দেখছি। মোটামুটি টুরিস্ট বিজনেস ঘিরেই এই জনপদ আস্তে আস্তে আরো স্বাবলম্বী হচ্ছে। রাস্তার আশে পাশে বাড়িঘর, রেস্টুরেন্ট সবখানে নান্দনিকতার ছোঁয়া।

আরেকটা মজার জিনিস খেয়াল করলাম। প্রায় সব খাওয়ার দোকানের মালিক এবং কর্মচারীরা যথেষ্ট ইয়াং এবং সবখানেই গিটার, কাহন সহ গানের মোটামুটি সরঞ্জাম আছে। দুপুরের রেস্তোরার খাবার ভালো লেগেছিলো। তাই সেইখানেই আবার গেলাম রাতের জন্য অর্ডার দিয়ে রাখতে। এরা অর্ডার পেলে তবেই খাবার রেডি করে। দোকানে গিটার দেখে আবদার করে গেলাম যে রাতে গান শোনাতে হবে কিন্তু!

একটু দূরেই খেলার মাঠ দেখলাম। মেঘের ভেতর ফুটবল খেলছে একদল কিশোর।

রাতে আর গান শুনা হয়নি। রাতে সবাই ছুটলো ক্লাবহাউজের দিকে। বড়পর্দায় খেলা দেখবে বলে। ক্রোয়েশিয়া ভার্সেস ফ্রান্সের ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনাল বলে কথা। আমরাও গেলাম। ক্লাব হাউজ টুরিস্ট, লোকাল, বিজিবি আর আর্মির পারসোনেল দিয়ে ভর্তি। সবাই হই হুল্লোড় করছে। লোকালয় থেকে দূরে ছোট একটা জায়গায় সবাই একত্র হয়ে ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখেছিলাম, এখন ভাবলেই অন্যরকম লাগে। ক্রোয়েশিয়া হারাতে মন খারাপ হয়েছিলো, কিন্তু লোকাল দুইএকজন ফ্রান্স ভক্তের আতশবাজি ফোটানো দেখেছিলাম অবাক হয়ে।

আধুনিকতার এত দূরে এত কিছু আসলেই কল্পনা করিনি। সাজেক প্রতি পদে পদে আমাকে অবাক করেছে। খেলা শেষে বেশ কিছু ছেলেপেলে মিলে পাহাড়ী গান ধরলো। রাত ১০ টার কাছাকাছি। মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনলাম আর হারিয়ে গেলাম কোথায় জানি! এত কিছুর মাঝে রাতের কোন ছবিই তোলা হয়নি। অবশ্য তুললেও ক্যামেরার কারণে ভালো আসতো না।

খুব ভোরেই উঠে গেলাম। উদ্দেশ্য কংলাক পাড়ায় গিয়ে সূর্যোদয় দেখা। বিছানা থেকে উঠেই দেখি অদূরেই পাহাড়ের ভাজে ভাজে এখনো মেঘ জমে আছে। আমাদের "চাঁদের গাড়ি" কে আগেই বলা ছিলো। রিসোর্ট থেকে কংলাক পাড়ার রাস্তার মুখে নামিয়ে দিলো। বাকিটা পথ হেঁটে যেতে হবে।

কংলাক পাড়া হলো সাজেকের হাইয়েস্ট পিক! এইখানেই অল্প কিছু বাড়িঘর আছে। তবে অনেকটা পাহাড় বেয়ে যেতে হবে। গাড়ি যাবার রাস্তা নেই।

IMG_20180716_073656.jpg

আমরা কিছু লাঠি জোগাড় করলাম পাহাড় বাওয়ার জন্য। কিন্তু চোখের সামনে দেখি লোকাল পিচ্চিগুলো তড়তড় করে উপরে উঠে যাচ্ছে কোন সাহায্য ছাড়া। ভালোই লজ্জা পেলাম। আর এটুকুই উঠতে আমার অবস্থা খারাপ। এত উপরের পাহাড়ি গ্রাম থেকেও একবারের পরিপাটী স্কুল ড্রেস পরা ছোট ছেলেমেয়েরা হেঁটে সাজেকের স্কুলে যাচ্ছে দেখে ভালো লাগলো খুব। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পরছে সবখানে!

কংলাক পাড়ার উপর থেকে চারিদিক পাখির চোখে দেখা যায়। একটু দূরেই সাজেকের একেবারে বার্ড ভিউ দেখা যাচ্ছে!

কংলাকে খুব বেশি সময় নষ্ট করলাম না। আমাদের আজকেই ফিরতে হবে। সেইখানে থেকে গেলাম সাজেকের ঢুকার পথেই "রক গার্ডেনে", রক গার্ডেন আর্মিদের বানানো ছোট একটা পার্কের মত।

আহামরি কিছু। যে প্রকৃতি গত দুদিন ধরে চারপাশে দেখেছি তার তুলনায় তো নস্যি! তাও কিছু সময় বসে আড্ডা দিলাম রক গার্ডেনে।


দুপুরেই বাসার দিকে রওনা দিলাম। এই অপরূপ সৌন্দর্য ছেড়ে যান্ত্রিক শহরের পথে। যেতে যেতেই ঠিক করে ফেললাম আবার ফিরে আসবো। টানা ১০-১২ দিন থাকবো আবার এলে। এই সৌন্দর্য থেকে দূরে থাকা অসম্ভব!

*আমি রোদে পুড়ব, বৃষ্টিতে ভিজব ফুল হয়ে ফুটব, পাখি হয়ে উড়ব আমি প্রকৃতি হব। আমি জোস্নার সৌন্দর্যের অবগাহনে সিক্ত হব আমি চৈত্রের পূর্ণিমা রাতে বসে বসে সুখতারা গুনব আমি প্রকৃতি হব।* - [মনজুর হাসান](https://golpokobita.com/golpokobita/article/5432/4710)


Return from মেঘ রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার দিন | সাজেক ট্যুর | শেষ পর্ব to pitboy's Web3 Blog

মেঘ রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার দিন | সাজেক ট্যুর | শেষ পর্ব was published on and last updated on 04 Aug 2020.